কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিশেষ এক কর্মকর্তাকে সুবিধা দিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চল্লিশ বছর বয়সে দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে প্রবেশ করে ধাপেধাপে অনিয়ম করে নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবার ডেপুটি রেজিস্ট্রার হতে তোড়জোড় শুরু করেছেন এ কর্মকর্তা। নিয়ম ভেঙ্গে নিজে সুবিধা নিয়ে ‘ভবিষ্যতে এই সুপারিশটি কোন নজির হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না’ এমন নিয়মের সুযোগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তিনি। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে ‘সেকশন অফিসার গ্রেড-২’ এ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন বিপ্লব মজুমদার। সরকারি চাকরীর বয়স সীমা ৩০ বছর হলেও তাকে নিয়োগ দিতে তৎকালীন প্রশাসন ৪০ বছর বয়স সীমা দিয়ে বিশেষ সার্কুলারে তাকে নিয়োগ দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এটি কোন অভিজ্ঞ লোক নিতে বিশেষ পদে নয়। বরং নিয়োগ দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় শ্রোণীর সেকশন অফিসার গ্রেড-২ পদে।
অভিযোগ রয়েছে তৎকালিন প্রশাসন তাকে নিয়োগ দিতেই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার তোয়াক্কা না করেই বিশেষ এই সার্কুলারের ব্যবস্থা করেন। এ কর্মকর্তা পরবর্তীতে পদোন্নতি নিতে ঘটান লঙ্কাকাণ্ড। ২০১৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে সেকশন অফিসার হন তিনি। কিন্তু ২০১৪ সালে তৎকালীন রেজিস্ট্রারের আশির্বাদে ‘ভবিষ্যতে এই সুপারিশটি কোন নজির হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না’ এমন একটি সুপারিশ নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরির সময়কালকে প্রথম শ্রেণী হিসেবে গণনা করান।
এ অনিয়মকে কাজে লাগিয়ে ২০১৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে চাকরীর বয়স ৩ বছর না যেতেই হয়ে যান সহকারী রেজিস্ট্রার। যদিও নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী রেজিস্ট্রার হতে প্রথম শ্রেণীতে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। সেসময়ে একই পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির বর্তমান সভাপতি জিনাত আমানসহ বেশ কয়েকজন থাকলেও বিশেষ এ সুবিধা দেয়া হয় শুধু মাত্র বিপ্লবকে। একই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নীতিমালার বয়স সীমার তোয়াক্কা না করে এবার ডেপুটি রেজিস্ট্রার হতে মরীয়া হয়ে উঠেছেন এ কর্মকর্তা।
আপগ্রেডেশন ও প্রমোশন নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী রেজিস্ট্রার পদে প্রথম শ্রোণীর কর্মকর্তা হিসেবে চাকরীর অভিজ্ঞতা ১০ বছর অথবা বর্তমান বা সমমান পদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতাসহ কর্মকর্তা (গ্রেড-১০) হিসেবে ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু এ কর্মকর্তা ২০১৩ সালে অর্থকমিটির ২২ তম সভার অনিয়মতান্ত্রিক সুপারিশ নিয়ে ৭ বছরে হতে চান ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যে পদে তিনি যাওয়ার কথা ২০২৩ সালে।
এদিকে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বোর্ড প্রতি বছর জুন ও ডিসেম্বরে হওয়ার কথা। এ নিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর কর্মকর্তা সমিতির স্বাক্ষরিত চিঠি থাকলেও বিপলবের বেলায় সে নিয়ম আর নেই। এক কর্মকর্তা জানান নভেম্বরে সিন্ডিকেট থাকায় তাকে সুবিধা দিতে এক মাস আগে বোর্ড করা হচ্ছে।
বিশেষ কর্মকর্তাকে সুবিধা দিতে কেন এত অনিয়ম এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তাদের মাঝে। একাধিক কর্মকর্তা নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ব্যক্তি চাকরী নিয়েছেন অনিয়ম করে। তার ওপর পদোন্নতি নিতে একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এবার এসবের লাগাম টেনে না ধরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে। একের পর এক অনিয়মের বিষয় জানতে বিপ্লব মজুমদারকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।
কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জিনাত আমান বলেন, এটা তো সিন্ডিকেট বা অর্থ কমিটিতে করা হয়েছে। আমাদের সে বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ার নাই। সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছু যেন নিয়ম অনুযায়ী হয়। এক কর্মকর্তাকে সুবিধা দিতে কেন এত অনিয়ম এ প্রশ্নে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড.মোঃ আবু তাহের বলেন, সহকারী থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হতে সে নিয়ম পূরণ করে। কিন্তু আগে যে এসব হয়ে আছে তা তো আমার কাছে স্পষ্ট না। তবে বিষয়টি উপাচার্য মহোদয় জেনে তিনি একটি কমিটি করে দিয়েছেন।
সূত্র: আই নিউজ